নাদুস-নুদুস, সর্বাঙ্গে সাদা লোমে আবৃত। অনেকটা রাজকীয় স্বভাবের। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার প্রিয় । সেমিনার , ক্লাস, সাংগঠনিক মিটিং থেকে বন্ধুদের আড্ডায় । বৈশাখী চত্বর, শহীদ মিনার কিংবা ক্যাফেটেরিয়া যেখানেই কোলাহল সেখানেই বর্তমান। শিক্ষার্থীদের সাথে এক প্রগাঢ় সম্পর্কের বাঁধনে সম্পৃক্ত একটি নাম- “ট্রাম্পি” ।
বলছি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার আদরের প্রিয় কুকুর ট্রাম্পি’র কথা। এই সেই ট্রাম্পি যার জন্মদিনে খোদ অভিনেত্রী জয়া আহসান ‘হ্যালো’ বলে স্বাগত জানিয়েছিলেন। ফেসবুকে যার রয়েছে দুই হাজারের মতো ফ্যান ফলোয়ার্স।
কুকুর আর বিড়ালের স্নায়ুতন্ত্র বেশ সংবেদনশীল। মানুষের আবেগ বোঝে তারা । এ জন্যই কুকুর-বিড়াল মানুষের পোষ মানে। বিজাতীয় জীবের সঙ্গে মানুষের এই বন্ধুত্বের গল্প নতুন নয়। তাই হয়ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা শিক্ষার্থী আর ট্রাম্পির মধ্যে অন্য রকম এক বোঝাপড়া ।
দিনটি ২০১৯ সালের ২৫ শে, মার্চ সোমবার ছিল। আসরের নামাজের পর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদের ভিতরে চলছিলো নিহত ঘোরী মোঃ ওয়াসিম আব্বাস-এর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মহফিল। শোকাহত সহপাঠী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দলীয় সহযোদ্ধারা যখন মহান রব্বুল আলামীনের দরবারে দুই হাত তুলে কান্নায় জর্জরিত। ঠিক তখন সবার অলক্ষ্যে মসজিদের বারান্দায় মাথা অবনমিত করে কান্না করছিল সিকৃবির আরেক সদস্য ট্রাম্পি।
এর ২ দিন আগে ২৩ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় ঘোরি মোঃ ওয়াসিম আব্বাসের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর ক্যাম্পাসে এলে সবার মতো সেও ব্যথিত হয়। সবার সঙ্গে ট্রাম্পিও ছুটে যায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। সেখান থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মিছিলের পেছনে পেছনে ট্রাম্পিও ছুটে চলে কদমতলি বাস টার্মিনাল ও হুমায়ুন রশিদ চত্বর। গান, আড্ডা আর আনন্দের সঙ্গী ট্রাম্পি শোকাবহ দিনেও সঙ্গ ছাড়েনি সিকৃবিয়ানদের। পরের দিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন ক্যাম্পাস থেকে মিছিল সহকারে নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে যায়। ট্রাম্পিও ছিল তাদের মিছিলের সঙ্গী। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার মিছিল-অবরোধে সেও ছিল সার্বোক্ষণিক।
ওয়াসিম আব্বাস নিহতের ঘটনায় শোকাহত সবার মতো বাদ যায়নি ক্যাম্পাসে বেড়ে ওঠা অবলা প্রানীটিও । তাই হয়ত মিলাদে অংশ নিয়ে তারও চোখ দিয়ে অঝোরে পানি আসে। মানুষের মতো সে বলতে না পারলেও এমন সব আচরণ প্রমাণ করে সহপাঠীদের মতো ট্রাম্পিও ওয়াসিম আব্বাস কে খুঁজে বেড়িয়েছে।
অথচ এই ট্রাম্পি কম ঝড়-ঝাপটা আর প্রতিকূলতার মধ্যে বেড়ে উঠেনি। ওয়াসিম আব্বাস নিহতের ঘটনার দিনকয়েক আগেও দুস্কৃতিকারীরা ক্যাম্পাসের প্রায় ১৮টি কুকুর কে বিষ প্রয়োগে মারার অপচেষ্টা করে। তখনি ক্যাম্পসের প্রাণী অধিকার সংগঠন প্রাধিকারের প্রাণীযোদ্ধারা এগিয়ে আসলে ১৪ টি কুকুর কে বাঁচানো সম্ভব হয় । সে যাত্রায় ট্রাম্পি বেঁচে গেলেও দুর্ভাগ্যবশত মারা যায় ট্রাম্পির অন্যতম বন্ধু ‘প্রমি’ সহ ৪টি। এরপর আবারো ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে পড়ে সে । একের পর এক বেশ কয়েকটি কেমোথেরাপির যন্ত্রণা সহ্য করে জীবনকে আবারো জয় করে ট্রাম্পি। এছাড়া গবেষণার লক্ষ্যে নেহাত কম সংখ্যক বার অস্ত্রোপচারের সাক্ষী হতে হয়নি তাকে।
প্রত্যেকবার এমন অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে ট্রাম্পি ফিরে আসে প্রাণচঞ্চল হয়ে। আবারো শিক্ষার্থীদের সান্নিধ্য পেলেই সম্মুখ বাহুদ্বয় ঊর্ধ্ব করে জড়িয়ে ধরে। শিক্ষার্থীরা যেমন ট্রাম্পিকে আদর করে ট্রাম্পিও যেন বিজাতীয়দের ভালোবাসা গভীর ভাবে উপভোগ করে। প্রভুভক্তি যে অবলা প্রাণীর জাতি সত্ত্বায় মিশে আছে, সেই সত্ত্বা থেকেইবা কিভাবে বের হবে ট্রাম্পি!
লেখক,
মোঃ সাইফুর রহমান
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট -৩১০০

1 Comment

Shelby Dimatteo · May 25, 2022 at 12:37 pm

I would like to thank you for the efforts you’ve put in penning this website. I’m hoping to view the same high-grade blog posts from you later on as well. In truth, your creative writing abilities has encouraged me to get my own, personal website now 😉

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *