#CallForWriting2022
Position : 6th
বিড়াল পোষার প্রতি বরাবরই একটা অনিচ্ছা ছিল, তার উল্লেখযোগ্য কারণ বিড়াল যখন তখন বিছানায় ওঠে আর যেখানে সেখানে তার লোম পাওয়া যায়। তাই ইচ্ছা থাকলেও কখনো বিড়াল পোষা হয় নি বাড়িতে। লকডাউনের শেষের দিকে যখন জীবনে ডিপ্রেশন লেভেল মোটামুটি ৯৫ ভাগের কাছাকাছি হঠাৎ একদিন দুপুরে আমার ভাই তাকে দেখতে পায়,রান্নাঘরের পেছনে ঝোপের মধ্যে বসে ডাকছে। বয়স আনুমানিক একমাসের মতো। কালো বিড়ালও দেখতে এত্তো সুন্দর হয় আমার ধারণা ছিল না। সে আসলে মাকে হারিয়ে ফেলেছে।
বেশ কিছু সময় পর আশেপাশে তার মাকে দেখা না গেলে ভাই তাকে ঘরে নিয়ে আসে। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন কোনো কাজের জন্য মা বাবা বাড়িতে ছিল না। তাকে প্রথমে কিছুটা ভাত খেতে দিলাম, তারপর জুতার বাক্সে কাপড় বিছিয়ে বসিয়ে দিলাম। সে একটুও নড়ল না। কিছু সময় পর ঘুমিয়ে গেলো। মা বাড়িতে ফেরার পরে তাকে রেখে দেয়া হবে না কি ফেলে দেয়া হবে এই নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্কের পর ঠিক হলো “আচ্ছা, আপাতত সে থাকতে লাগুক।”
এর একদিন পরে দেখি মা তাকে মিনি বলে ডাকছে, আর তারও একদিন পর থেকে সে এই নাম সাচ্ছন্দে ডাক শোনা শুরু করেছে। মা তাকে সবসময় খাবার দিতো। তাই বোধহয় মাকে সেও নিজের মা মনে করতো। মা বসে থাকুক বা শুয়ে সবসময় সে মায়ের কোলের কাছে গিয়ে শুয়ে পরত। প্রথমেই তার টয়লেট নিয়ে সমস্যা দেখা দিলো। সে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত বুদ্ধিমান কারণ বাথরুমের সামনের পাপোশটা ভেজা ভেজা থাকায় সেখানেই পি এবং পটি করার জায়গা বেছে নিলো। কয়েকদিন আমাদের ওপর এই অত্যাচারের ফলে মাথা খাটিয়ে বের করলাম তার টয়লেট, কুলার ওপর চুলার ছাই। কারণ ইতিমধ্যেই তাকে আর বাড়িতে জায়গা না দেবার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। সারাদিন তার পিছনে লেগে থাকলাম, পটি করার লক্ষণ বুঝলেই দৌঁড়ে নিয়ে গিয়ে রাখতাম কুলায়। পরেরদিন বুঝলো এইটা তার টয়লেট, একাই সময়মত যাওয়া শুরু করলো, সমস্যা মিটলো।
রাতে প্রথম তিন চারদিন জুতার বাক্সে ঘুমিয়েছে, কিন্তু তারপর থেকে মাঝরাতে উঠে আসে আমার বালিশের পাশে। আর সে একা ঘুমাবে না। আমি বা ভাই কেউ পড়তে বসলে টুক টুক করে এদিক ওদিক থেকে চেয়ারে উঠে গিয়ে কোলের মধ্যে শুয়ে ঘুম, ব্যাপক আরাম আর কি! আর একটি ব্যাপক আরামদায়ক জায়গা ল্যাপটপের কিবোর্ড! কিছুক্ষণ চলার পর কিবোর্ড গরম হয়ে যেতো, আর সে উঠলে তাকে নামানোও কষ্ট হতো। সপ্তাহে একদিন তাকে শ্যাম্পু করানোর মিশনটা ছিল রীতিমত ভয়াবহ!
লকডাউনের প্রতিটা দিন দশ ঘন্টা ফোন চালানো আমি ফেসবুক ডিএক্টিভেটেট করে দিয়ে সফল ছিলাম একমাসের বেশি! সারা দিন তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম কিনা! ক্লাস শুরু হলো, হলে ফিরে এলাম, বাড়িতে প্রতিদিন ভিডিও কলের অর্ধেক সময় মিনির সামনে ফোন! তারপর কোনো এক ছুটিতে বাড়ি থেকে আসার সময় তাকে কিছুটা অসুস্থ দেখে হলে ফিরেছিলাম, ভাবিনি আর তাকে কখনো বাড়ি ফিরে দেখতে পাবো না।
লেখকঃ
কথামালা বিশ্বাস,
BGE, SAU
0 Comments