ছেলেবেলায় শীতের কোন এক ছুটিতে নানা বাড়ি যেতে যেতে অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছিল। সকালে ঘুমথেকে ওঠে দেখি নানি মামি মা তিনজনে মিলে পিঠা তৈরি করছে। এর মধ্যে নানাভাই আমাকে নিয়ে রাস্তার পাশের একটা দোকানে গেলেন।
কিছু মিষ্টি জাতীয় জিনিস কিনে আমাকেএকা বাড়িরদিকে পাঠিয়ে দিলেন। হঠাৎ রাস্তার পাশের একটা কুকুর আমায় তাড়া করল। আমি ভয়ে চিতকার দিয়ে ওঠলাম বড় মামা দৌড়ে এসে আমাকে কুকুরটার কবল থেকে রক্ষা করলেন। কুকুরটার উপরআমার খুব রাগ হলো।মনে মনে স্থির করলাম এর প্রতিশোধ নিব। কিন্তু মামা আমাকে এই বলে সান্ত্বনা দিলেন যে কুকুর খুব বন্ধু সুলভ এবং প্রভুভক্ত প্রানী।
দুপুরে নানি আর মামি মিলে আনেক রান্নাবান্না করছিলেন। সারা বাড়িটা যেন পোলাও মাংসের গন্ধে ভরে ওঠছিল । আমি ঘরে বসে নানাভাইয়ের সাথে গল্প করছিলাম। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি যে কুকুরটা আমায় তাড়া করেছিল সে উঠানে বসে আছে আর রান্নাঘরের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নানাভাই বললেন কুকুরটি ক্ষুধার্ত এজন্যই এভাবে তাকিয়ে আছে । আমার আর তখন বুঝতে বাকি রইলনা যে কুকুরটা কি জন্য আমাকে তাড়া করেছিল। আমার হাতে খাবার দেখেই কুকুরটি সকালে আমায় তাড়া করেছি। দুপুরে খাওয়ার সময় কয়েকটি মাংসের টুকরা আমি কুকুরটাকে দিয়েছিলাম। এর পরথেকে প্রত্যেক খাবারের সময় হলে কুকুরটি হাজির হয়ে আমার কাছে থেকে কিছু খাবারের জন্য আসত। দেখতে দেখতে আমার বাসায় ফেরার সময় ঘনিয়ে আসল। কুকুরটাকে বিদায়ের দিন সকালে দেখতে না পেয়ে মনটা খুব খারাপ লাগছিল। বাড়ির প্রধান ফটকে আসতেই দেখি কুকুরটি দাড়িয়ে আছে। আমার মনে হল এ নির্বোধ প্রানীটিরও যেন বুদ্ধির উদয় হয়েছে।আমাদের সাথে সাথে কুকুরটা বড় রাস্তা পর্যন্ত এসেছিল। আমি যখন গাড়িতে ওঠেছিলাম তখন কুকুরটার চেহারায় একটা স্পষ্ট শুন্যতার ছাপ আর চোখে পানি দেখেছিলাম। আমার নিজেরও কুকুরটার জন্য খুব খারাপ লাগছিল।
বাসায় ফিরে আসার পর আর কুকুরটার কথা খুব একটা মনে ছিল না।৷ হঠাৎ কোন এক প্রয়োজনে মা আর আমার নানা বাড়ি যেতে হয়েছিল। গিয়ে যা শুনলাম তা আর আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারন সৃষ্টি জগতের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জীব মানুষের দ্বারা এত নিকৃষ্ট কাজ কিভাবে সম্ভব। সেই কুকুরটিকে একটা মুরগী চুরির অপরাধে নাকি পাউরুটির ভেতর ব্লেড ঢুকিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। গলায় ব্লেড আটকে কুকুরটি দুর্বল হয়ে আসলে কয়েকজন কিশোর লাঠিপেটা করে কুকুরটাকে হত্যা করে। মারা যাওয়ার পরও নাকি কুকুরটার একটু মাটিও জুটেনি, মাঠের ওপাশেরখালে ভাসিয়ে কুকুরটার সলিল সমাধি করা হয়েছিল।
একটা অবুঝ প্রানী যেখানে সকালে তাড়া করে বিকালে বন্ধু হয়ে যেতে পারে, কয়েকদিনের পরিচয়ে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যেতে পারে সেখানে মানুষ বুদ্ধিমান প্রানী হয়েও তার কত যাতনা দিয়ে এসব প্রানী হত্যা করে। এসব প্রানীদের রক্ষায় আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
সামান্য অপরাধের জন্য কোন প্রানীকে যাতে এরকম নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা না হয়। এ সকল অবুঝ প্রানীর মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠাকরতে হবে ।
Md. Saruar Jahan Nayem
Veterinary Faculty
Level-2, Semester-1
0 Comments