বিদায়: ট্রাম্পি
একটানা ৪ ঘন্টা যাবৎ থিওরি ক্লাসের চাপে সেদিন দুপুরে ১২ টা -১ টার ক্লাসে ক্লান্ত-অলস অবস্থায় ঝিমাচ্ছিলাম। ক্লাস শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই হঠাৎ যা কানে আসলো তারপর আর কিসের ঝিমুনি, হকচকিয়ে উঠলাম– কে যেন বলে উঠলো আমাদের ট্রাম্পি নাকি আর নেই!
কথাটা শোনার পর আমি কেন, সবাইই যেন একটু নড়েচড়ে বসলো। বিশাল বড় রকমের একটা ধাক্কাই খেলাম। এইতো গতকাল সন্ধ্যা-রাতেই না তোর সাথে খুনসুটি-খেলা করে আসলাম, তোকে বিস্কুট কিনেও খাওয়ালাম।তোর জন্য নতুন করে খাবার-ঔষধ আনার জন্য সিনিয়র ভাইরা কথা বলছিলেন। তোর দুষ্টুমির জন্য শরীর ময়লা হওয়ায় তোকে নিয়ে ক্লিনিকের দিকে গিয়ে গোসল করানোর ব্যাপারেও কথা হচ্ছিলো, কিন্তু আজ যে এইভাবে এখানেই যে তোর শেষ গোসলটা করাতে হবে তা হয়তো আমাদের কারোই জানা ছিলো না। এইতো আর কয়েকটা দিন পরেই না তোর জন্মদিন উপলক্ষ্যে কত আয়োজন সবার মাথায় ঘুরছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে কি থেকে যে কি হয়ে গেল বুঝে উঠতে কষ্ট হচ্ছিলো খুব।
ট্রাম্পির সাথে আমার পরিচয়ের কাহিনীটা অনেকটা গল্পের মতোই শোনাবে। সিকৃবি ক্যাম্পাসে ভর্তি হতে আসার দিন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে শুভেচ্ছাদূতের মতো অভ্যর্থনা জানিয়েছিলো একটা সাদা রংয়ের কুকুর। বড়ই অদ্ভুত তার চাহনি, তার আচরণ। সচরাচর কুকুরের মাঝে এরকম আচরণ দেখা যায় না বললেই চলে। প্রশাসনিক ভবন থেকে অনুষদীয় ভবন, এমনকি হলেও পাশে পাশে ঘুরেছিলো পুরো ভর্তি প্রক্রিয়ার সময়টাই। সেদিন ইমিডিয়েট সিনিয়র ভাইদের থেকে সেই কুকুরটার ব্যাপারে জানা, নাম তার ট্রাম্পি।
কখনো ক্লাসে, কখনো ফুচকা চত্ত্বরে, কখনোবা হলে বা ইকোপার্কের দিকে, যেখানেই যেতাম, যেখানেই থাকতেম কিভাবে কিভাবে যেন সেখানেই চলে আসত। কিছু কিছু সময়ে তো আমাদের আগেই গিয়ে হাজির হয়ে থাকতো। মনে পড়ে, প্রথম বর্ষে থাকতে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মাঠে ২৪ তম ব্যাচে ভাইদের সাথে সকালে ক্রিকেট খেলার কথা ছিলো ল। সকালে আনুমানিক ৮ টার দিকে আমাদের সবাই সেখানে গিয়ে দেখি এই কুকুরটা আমাদের আগেই গিয়ে মাঠে উপস্থিত! যেন খেলার আগে পিচ পরিদর্শন করে ঘেউ ঘেউ করে আমাদের জানাচ্ছিলো যে আজকে পিচটা ভালো কন্ডিশনে আছে, আজকে তোদের ২৬ ব্যাচের টিমটাই জিতবে। জিতেও গিয়েছিলাম আমরা সেদিন বড় ব্যাবধানে।
তারপর খুব দ্রুতই এই ক্যাম্পাসের অন্যান্য মানুষগুলোর মতো যেন আমার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ
[মূল লেখা: মো. জিহাদ আহাম্মেদ
অর্গানাইজিং সেক্রেটারি (ওয়াইল্ডলাইফ),
প্রাধিকার]
0 Comments