#CallForWriting2022
Position : 5th
সারাদিন কাজ করার পর মানুষ যখন ঘরে ফিরে আসে ঠিক তেমনি সারাদিন তীব্র রোদ দেওয়ার পর সূর্যটা এখন যেনো ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন মনে হচ্ছে যেনো সূর্যটা পশ্চিম আকাশে গলে যাচ্ছে যার রক্তিম আভা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি মিঠুকে বাজারে পাঠানোর। ওকে সুন্দর মত গোসল করিয়ে ওর শিংয়ে কাজল মাখিয়ে দিয়েছি। হালকা রোদের আলোয় ওর সাদা-কালো লোমগুলো চিকচিক করছে। বেশ লাগছে দেখতে! বুঝতে পারছি ওর মনটা ভালো নেই। আমাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে কিনা!
বাবা আর ছোটভাই মিঠুকে নিয়ে চললো বাজারের দিকে। মিঠুকে নিয়ে যাওয়ার সময় স্পষ্ট খেয়াল করলাম ওর চোখের কোণে জল! মনের অজান্তেই চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।ফিরে গেলাম সেই পুরনো স্মৃতিতে।
মিঠু হওয়ার কিছুদিন পরেই মিঠুর মাকে চার-পাঁচ টা কুকুর মিলে মেরে ফেলে। তখন থেকেই মিঠুকে আমি দেখাশুনা করি। আদর করে নাম রাখি ‘মিঠু’। মা না থাকায় আশেপাশের বাদবাকি ছাগলের তুলনায় মিঠু অনেক ছোট থেকেই ঘাস খাওয়া শিখে যায়। মিঠু বলে ডাকতে দেরি হলেও তার কাছে আসতে দেরি হতো না। রাত যায়, দিন যায়। ধীরে ধীরে মিঠুও বড় হয়ে ওঠে। এইতো বেশিদিনের কথা নয়! কয়েকদিন আগেই মিঠু ঘাস খেতে খেতে মাঠের অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়। পথ হারিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছিলো না। এইদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে মিঠুর ফেরার নাম নেই। রাজ্যের ভয় ও উৎকণ্ঠা আমাকে ঘিরে ধরলো। বাবাও বাড়ি ফিরে নি তখন। আশেপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও পাচ্ছিলাম না। বুক ফেটে কান্না আসছিলো আমার। হাজারবার ডাকার পরও মিঠু কোনো সাড়া দেয়নি। উপায় না পেয়ে ছোটভাইকে সাথে নিয়ে টর্চলাইট হাতে বেরিয়ে পরি মাঠের অপর প্রান্তের গ্রামের উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে মাঠের অপর প্রান্তে চলে যাই। দূর থেকেই শুনতে পাই মিঠুর ভয়মিশ্রিত ডাক। আমি দূর থেকেই জোরে ডাক দেই ‘মিঠু…!!!’ চিরপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে দৌড়ে আসতে মিঠুর খুব একটা সময় লাগেনি। মিঠুর গলা জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলাম সেদিন। সেদিনই প্রথম মিঠুর চোখে জল দেখতে পেয়েছিলাম। হয়তো সেটা ছিলো ফিরে পাওয়ার আনন্দঅশ্রু!
সময়ের সাথে যেমন মিঠু বড় হয়েছে, তেমনি বড় হয়েছি আমিও। বদলে গেছে চারপাশ, বদলে গেছে পরিস্থিতি। আজকেও সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। আকাশ থেকে সূর্যের শেষ রশ্মিটুকুও বিলীন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজ মিঠু ফেরেনি। বাবা ফিরে এসেছে ছোটভাইয়ের জামা ও সাথে কিছু ইদের বাজার নিয়ে।
লেখকঃ
Md Jihad Hosen
DVM27, SAU
0 Comments