#CallForWriting
Position : 10th
ঈদের ছুটি কাটিয়ে সবে মাত্র হলে গিয়ে উঠেছি ৷ থাকি হযরত শাহ পরান (রঃ) হলে ৷ সর্বশেষ কোনায় ১২৪ নং রুমে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেলাম ৷ কথা বলা শুরু করতেই পিছনে ক্ষীন করুন শব্দ পাওয়া গেল ৷ “মিউ” ৷ প্রথমে ঠিক অনুমান করতে পারলাম না৷ পরক্ষনেই আবার শব্দ হলো মিউ-মিউ।
এবার আর বুঝতে বাকি রইল না ৷ সে এক হতভাগী বিড়াল ছানা, যাকে জন্ম দিয়ে মা বিপদমুক্ত হয়ে ফেলে গেছে ৷ হতভাগীকে আমি অভাগী নাম দিলাম ৷ এই পৃথিবীতে কারো কাছে কি এই তুচ্ছ অভাগীর জীবনের কোনো মুল্য আছে ? মূল্য না থাকার পাল্লা যে ঢের বেশি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ৷কারন আধুনিকতার যাতাকলে মনুষত্ত্বটা হারিয়ে গেছে ৷ অতৃপ্ত প্রাপ্তির পিছনে সবাই যখন হন্য হয়ে ছুটছে তখন তাদের কাছে এই তুচ্ছ প্রানীর জীবনের মূল্য আশা করাও বোকামি ৷ যাইহোক, অভাগীর করুণ মা, মা সুর আমার কাছে বারবার বাচাঁর আকুতি জানাচ্ছিল ৷ অসুস্থ শরীর নিয়ে বাজারে গেলাম ৷ একটা গুড়ো দুধের প্যাকেট কিনলাম ৷ কিন্তু তার ওই ছোট মুখে খাবার দিবো কিভাবে ৷ খানিকক্ষণ ভেবে একটা উপায় পেলাম ৷ ঔষধের দোকানে গিয়ে একটা ড্রপার চাইলাম।দোকানি সাফ জানিয়ে দিলো খোলা ড্রপার নেই ৷উপায়ন্তু না পেয়ে অগত্যা একটা ড্রপার যুক্ত বাচ্চাদের ঔষধ কিনলাম ৷ পানিতে গুড়ো দুধ মিষিয়ে ড্রপারে দিয়ে খাওয়ালাম ৷ রোজ পাঁচ ছয়বার খাবার খাওয়াতে হয় তাকে ৷ ধীরে ধীরে অভাগী বড় হয়ে উঠল ৷ এখন সে নিজেই খেতে পারে ৷আমার অন্য কোনো সফলতায় এত তৃপ্তি হয় নি যতটা এক্ষেত্রে হয়েছে ৷ কারন আমি পেরেছি সভ্যতার নোংরা শিকল ভেঙ্গে নিচু হতে ৷পেরেছি অভাগীর জীবনের মূল্য দিতে ৷ কাল্পনিকতার অভাবে তার জীবন কাহিনিতে তেমন মহাত্ব্য ফুটে না উঠলেও এতটুকু হলফ করেই বলা যায় আমি সেদিন শুধু একটি মৃতপ্রায় জীবনকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম ৷একটুর জন্যও তাকে প্রজাতি হিসেবে আলাদা করিনি ৷ কিন্তু এরকম হাজারো অভাগা-অভাগী যে পড়ে রয়েছে তাদের কি হবে ৷ মনে-মনে ভাবলাম যে যদি এরকম একটা টিম গঠন করা যায় যারা এই অবলা প্রানীগুলোকে বাঁচিয়ে তুলবে ৷যাদের কাছে সবার জীবনের গুরুত্ব থাকবে৷কিন্তু এসব ভাবনার জন্য নিজেকে একটুও বুদ্ধিমান মনে হয়নি যখন জানতে পারলাম এ সুবুদ্ধি অনেক আগেই কারো মাথায় এসে গেছে৷ গঠিত হয়েছে প্রানীর অধিকার আদায়ের সংগঠন প্রাধিকার ৷ অভাগীর জীবনই আমাকে প্রাধিকারের সদস্য হতে উদ্ধুদ্ধ করেছে ৷প্রাধিকার সম্পর্কে সম্পুর্ণ জানতে পেরে আমি নিজেকে খুবই ছোট মনে করি কারন তাদের এরকম হাজারো অভিজ্ঞতা রয়েছে ৷আমি প্রাধিকারের সদস্য হতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করি কারন আমার হাতে শত অভাগীর বিপন্ন জীবন রক্ষা পাবে ৷ আমার কাছে সকলের জীবনই অমূল্য সেটা যার জীবনই হোক।
লেখকঃ
Imran Mia
DVM, SAU
0 Comments