চলছে জৈষ্ঠ্যমাস। গরম পড়েছে বেশ ভালোভাবেই। সাথে আর্দ্রতা তো আছেই..এইসময় কুকুর-বিড়ালের হিট স্ট্রোকের ঝুকি অনেক বেড়ে যায় এবং প্রায়ই ক্লিনিকে আমাদেরকে হিট স্ট্রোকের ট্রিটমেন্ট করতে হয়। অথচ আমরা একটু যত্নশীল হলেই এড়িয়ে চলতে পারি এমন পরিস্থিতি। তাই চলুন জেনে নেই গরমে কিভাবে আপনার-আমার আদরের বিড়ালের যত্ন নিবোঃ
১. খাবার পানিঃ
গরমে নিজেকে শীতল রাখতে পানির কোন বিকল্প নাই। নিজেকে ঠান্ডা রাখতে গিয়ে এই সময় শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। তাই চেষ্টা করুন তাকে প্রচুর পরিমান পানি খাওয়াতে। তার খাবারের জায়গায় বা তার আশেপাশে সব সময় একটা পানির পাত্র রাখুন, যাতে সে ইচ্ছামতো পানি পান করতে পারে। এক্ষেত্রে একটা জিনিস খেয়াল রাখা উচিত যে, বিড়ালের এবং কুকুরের পায়ের পাতা ঘামে। তাই তার চলার পথে বা বসে থাকার জায়গায় পায়ের ভেজা দাগ দেখলে বুঝবেন প্রচুর পানি শরীর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ তার পানি দরকার।
২. খাবারঃ
এই সময় অনেকেই অভিযোগ করেন যে বিড়াল খাবার কম খাচ্ছে। এটা আসলে স্বাভাবিক ব্যপার। গবেষনায় দেখা গেছে গরমে বিড়াল শীতকালের তুলনায় প্রায় ১৫% খাবার কম খায়। তাই চেষ্টা করবেন সবসময় ই ফ্রেশ খাবার দিতে এবং শুকনো খাবার এড়িয়ে চলতে। ড্রাই ক্যাটফুড এড়িয়ে চেষ্টা করুন ঘরোয়া খাবার খাওয়াতে। খাবারে তেল-চর্বির পরিমানটা শীতকালের তুলনায় অল্প হলে ভালো। বিস্কুট, কেক জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো এই সময়। স্ট্রেস কমানোর জন্য ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন লেবুর রস দেওয়া যায় খাবারে.. তবে সেটা খুব অল্প পরিমানে।
৩. ঘুমঃ
বিড়াল প্রজাতিভেদে ১৬ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমায় দিনে। গরমকালে শরীরে অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন থেকে বাচতে ঘুমের পরিমানটা আরো বাড়িয়ে দেয়.. তাই এটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কোন কারন নাই। তাকে তার মতো ঘুমোতে দিন।
৪. খেলাধুলাঃ
স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য যদিও খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কিন্তু গরমে বিড়াল খেলাধুলা একটু কমিয়ে শান্ত থাকতে চায়। খেয়াল রাখবেন সরাসরি রোদের মধ্যে যেন না যায় এবং খেলাধুলার সময়টা হবে সকাল এবং রাতে অর্থাৎ যখন একটু ঠান্ডা থাকে পরিবেশ।
৫.গোসলঃ
গোসল নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন তবে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পুর্ন আপনার উপর। তবে শীতের তুলনায় ঘন ঘন গোসল করানো যায় গরমের সময়। আর গোসল শরীর ঠান্ডা রাখার খুব সহজ একটা উপায়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কানে যেন পানি না ঢুকে এবং গোসলের পর অবশ্যই গা ভালোভাবে শুকিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও খুব গরমের সময় পায়ের পাতা বার বার ভেজা কাপড়ে মুছে দিলে বা পানিতে ভিজিয়ে রাখলেও শরির খুব দ্রুত ঠান্ডা হয়। আবার গোসল করাতে না চাইলে প্রতিদিন ভেজা কাপড়ে গা মুছে দেওয়া যায়।
৬. গ্রুমিংঃ
এসময় বিড়াল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি নিজের শরীর চাটে। কারণ এতে করে মুখের লালা গায়ে লাগে এবং সেটা বাষ্পীভূত হওয়ার সময় শরীর ঠান্ডা হয়। তাই এটা দেখে ভয় পাবার কিছু নাই। পার্শিয়ান, ম্যানিকোন ইত্যাদি লোমস বিড়ালের ক্ষেত্রে গরমের আগে গায়ের লোম হালকা ট্রিম করে দেওয়া ভালো। এতে করে লোম পড়া অনেক কমে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা সহজ হয়। এছাড়াও গরমে প্রচুর মাইট, ম্যাগট, ফ্লী এগুলো হয় গায়ে। তাই গরমে প্রতিদিন বিড়ালের লোম আচড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে পরজীবী দূরে থাকবে এবং ভেংগে যাওয়া লোমগুলোও ফেলে দেওয়া সহজ হয়।
থাকার জায়গাঃ
গরমের সময় অবশ্যই বিড়ালকে ঠান্ডা স্থানে থাকতে দিতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত ঠান্ডা না লাগে। এ সময় কোন ভাবেই কুকুর-বিড়াল ছাদে আটকে রাখা যাবে না।
অতিরিক্ত গরম লাগলে করনীয়ঃ
১. যেকোন কারনে বিড়ালের অতিরিক্ত গরম লাগলে অবশ্যই খুব দ্রুত তাকে ঠান্ডা পরিবেশে নিয়ে আসতে হবে (সরাসরি এসির লোয়েস্ট টেম্পারেচারে না নিয়ে একটু সময় নিয়ে আস্তে আস্তেই ঠান্ডা করতে হবে তবে দ্রুত যেন গরম স্থান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়),
২. পায়ের পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে অথবা ভেজা কাপড়ে পা মুছে দিতে হবে
৩. প্রচুর পানি খেতে দিতে হবে।
৪. যদি হিট স্ট্রোক এর লক্ষন দেখেন তাহলে দ্রুত ভেট এর স্মরনাপন্ন হতে হবে।
মনে রাখবেন আপনার তড়িৎ পদক্ষেপই পারে যেকোন ধরনের বিপদ থেকে বিড়ালকে রক্ষা করতে।
কখন বুঝবেন আপনার বিড়ালের অতিরিক্ত গরম লাগছে?
অতিরিক্ত গরমে বিড়াল যেসকল লক্ষণ দেখায় সেগুলো হলোঃ
১. অস্থিরতা এবং ঠান্ডা জায়গা খোজা
২. শ্বাস-প্রশ্বাস খুব দ্রুত হয়ে যাওয়া এবং মাত্রাতিরিক্ত শরীর চাটা
৩. কুকুরের মতো জিহবা বের করে শ্বাস নেওয়া এবং লালা ঝরা
৪. পায়ের পাতা অতিরিক্ত ঘামা (ফ্লোরে ভেজা দাগ দেখা যায়)
৫. শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া
৬. জিহবা এবং নাকের ভেজা অংশ অতিরিক্ত লাল হয়ে যাওয়া
৭. বমি করা
৮. মাথা ঘুরানো
৯. এবং খুব সিভিয়ার কেসে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন।
কার্টেসিঃ Pet Advisor – Online Veterinary Support
0 Comments