আব্দুল্লাহ আল মামুন
দুপুরবেলা সূর্যের প্রখর তাপে চারদিকে খা খা করছে ।সাথে  কেমন একটা ভ্যাপসা গরম। এই রোদ আর গরমে ঘরের কোনায় বসে থাকার শক্তি রুপমের নাই। বাড়ির পিছন দিকে বিশাল এক জঙ্গল। জঙ্গলে প্রচুর শিয়াল থাকে। তাই  রুপম নাম  দিয়েছে ‘শিয়ালবন ’। লোকে অবশ্য ‘শিয়ালটুর আড়া ’ বলেই ডাকে।  বনের
আয়তন প্রায় এক বর্গকিলোমিটার। কি নাই সে বনে?  আছে হরেক রকমের  গাছপালা,পশু-পাখি,সাপ-কিটপতঙ্গ। আরো নাম না জানা কত প্রানী। এককালে বাঘও থাকত সে বনে!  দাদা-দাদী ছোটবেলায় গল্প শুনাতো।
বনের ভিতর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে তিনটা সরু রাস্তা। দুর থেকে দেখতে অনেকটা সুরঙ্গের মতো। সরু পথ ধরে হাটতে বেশ ভালোই লাগে রুপমের । বন পার হলেই একটা বিল। বনের শেষ প্রান্তে বিলের শুরুতে একটা বড় কদম গাছ। পাশেই বড় একটা কড়ই গাছ। ক্লান্ত কৃষকেরা এই গাছের ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নেয়। সেখানে কি বাতাস ! মন মাতানো বাতাসে চোখে ঘুম চলে আসে। অনেকে তো কড়ই গাছের গুড়িতে ঘুমিয়ে পড়ে। শ্রাবণ মাসে কদম ফুল ফুটলে এলাকার ছোট ছেলে মেয়েরা ফুল নিতে আসে। জায়গাটার অন্যরকম একটা সৌন্দর্য আছে। তাইতো রুপম জায়গার নাম দিয়েছে “বেহেশত খানা”।এরপাশেই যে গাছগুলো আছে তাতে পাখিদের আনাগোনা চলে সবসময়। একটু দুরেই মাটিতে  গর্ত করে বাসা বানিয়েছে কিছু শিয়াল। সাথে কিছু খেঁকশিয়াল, বেজিও থাকে থাকে।
গরমের দিনে রুপমের বেশিরভাগ সময় এই বেহেশত খানাতেই কেটে যায়। আজকের গরমেও তার ব্যাতিক্রম ঘটে নি। সে সরু পথ ধরে হাটতে থাকে। মাঝে মাঝে দুই আঙুল মুখে দিয়ে বাশিঁ বাজায় সে । তার অনেক কৌশল জানা আছে।
সে আঙুল দিয়ে কোকিলের ডাক দিতে পারে। তার কৌশলে মুগ্ধ না হয়ে পারেনা কেউ।
সে হাটতে হাটতে যখন বনের মাঝে আসে তখনই নেউলা বুড়ার দিঘির পাড়ে একটা শিয়ালকে দেখতে পায়। সে দিঘির ধার দিয়ে শিয়ালের দিকে এগুতে থাকে। শিয়াল বুঝতে পেয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় বেহেশত খানার দিকে। রুপম কড়া নজর রাখে শিয়ালের উপর আর নিঃশব্দে হাটতে থাকে শিয়ালের পিছু নিয়ে। হ্যা,শিয়াল বেহেশত খানার পাশেই এক ডুমুর গাছের গুড়ির সামনে বসে পড়লো । রুপমও কড়ই গাছের গুড়িতে বসে গেল। বিলের বাতাসে তার দেহ মুহূর্তে ঠান্ডা হয়ে আসল। সে নিজেকে প্রশ্ন করে,“এই জায়গাটা এতো সুন্দর কেন? কেনই বা এখানে পাখিদের আনাগোনা, শিয়াল বেজির লাফালাফি, কদম ফুলের বাহার? সে গভীর  ভাবনায় বিভোর হয়ে যায়।
ওদিকে শিয়ালটিরও দুচোখে চিন্তার ভার।সেখানে বসে ভাবতে লাগল,রুপম কীভাবে এত বদলে গেল ! এই তো বছর দুয়েক আগে সে আমাকে দেখলেই লাঠি নিয়ে পিছু ধাওয়া করত,ইট পাটকেল ছুড়ে মারত,বাটুলে মার্বেল নিয়ে ছুড়ত বুলেট গতিতে , কোথাও পাঁচটা মিনিট  বসে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দিত না। কোনো পাখিই একজায়গায়  বসে শান্তি মতো গান গাইতে পারত না। পাখির বাসায় পাখি ডিম খুজে পেত না, বাচ্চাদের খুঁজে হয়রান হয়ে যেত পাখিগুলো।
কিন্তু আজ রুপমের বসে থাকা দেখে শিয়াল আর ভয় পায় না। ধীরে ধীরে কড়ই গাছের দিকে আসে। লেজ টা গুটিয়ে বসে, মুখ ভেংচি কেটে ঘুরিয়ে নেয়।
রুপম শিয়ালের মনের প্রশ্ন বুঝে ফেলে ।সে উত্তর দেয়, “ আমি এখন  প্রাধিকারে কাজ করি”।
 প্রাধিকার! শব্দ শুনে শিয়াল ভেবাচেকা খেয়ে যায়।  শব্দটি বুজে উঠতে পারছে না।
অল্প কিছু সময় পরে রুপম খেয়াল করল তার চারপাশে কয়েকটা  খেঁখশিয়াল,বেজি রোদে পা মেলে গড়াগড়ি  করছে। দুটা ঘুঘু কদম ডালে বসে সুর তুলছে “কুকঘু ঘু ঘু…….”
আব্দুল্লাহ আল মামুন
ফ্যাকাল্টি অফ ভেটেরিনারি অ্যানিম্যাল এন্ড  বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস
লেবেল-১, সেমিস্টার -২
Attachments area
Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *