প্রকৃতি সংরক্ষণের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নিয়ে মহামারী করোনাভাইরাস থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের কর্মকাণ্ড চালানোর তাগিদ দিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। করোনা সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকারকে ‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মানবস্বাস্থ্যের সুরক্ষার’ পরিকল্পনা করার উপরও জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে এই আহ্বান জানান গবেষকরা। চিঠিতে তারা মূলত বলেন, কীভাবে এই লকডাউন থেকে বের হয়ে নতুন বিশ্বের অর্থনীতি পরিচালিত হবে তা-ই এখন বড় বিষয়।
অস্ট্রেলিয়ান গবেষকদের দাবি, এটি বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির এখন থেকেই সঠিক ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিলে প্রকৃতিতে যে ভারসাম্য ফিরে এসেছে তা রক্ষা করা সম্ভব হবে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, করোনা ভাইরাসের এই বিপর্যয়ের মধ্যে কিছু সুফল পেয়েছে প্রকৃতি।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালযয়ের ড. রায়ান পিয়ারসন বিবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন “এমন অনেক সংবাদ পাওয়া গেছে যে, বন্য প্রাণীর সংখ্যা বেড়েছে এবং এমন জায়গাগুলিতে এই সকল প্রাণি দেখা গিয়েছে যা অনেক দিন দেখা যায় নি।” অর্থাৎ লকডাউনের সময় মানুষের চলাচল না থাকায় এবং দুষণ কমে যাওয়ায় নির্দিষ্ট প্রজাতিগুলি আবার তাদের আগের জায়গায় ফিরে আসা শুরু করেছে, বিশেষ করে জলাশয়ের প্রাণীগুলো বেশি উপকৃত হচ্ছে বলেও মনে করেন ড. পিয়ারসন।
তাঁর মতে, দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করা না হলে এধরণের প্রভাব কত দিন স্থায়ী হতে পারে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না ।
ইউক্রেনের বিপর্যয়কর চেরনোবিলের পারমাণবিক দুর্ঘটনার ফলস্বরূপ এর চারপাশের বিস্তর উদ্ভিদ প্রান্তরকে পরিবেশগত রিজার্ভ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন এই প্রকৃতিকে সুরক্ষা দিতে হবে।
খোলা চিঠিতে ড. পিয়ারসন ব্যাখ্যা দেন, “কলম্বিয়া সংঘাত, বেসরকারী সুরক্ষিত অঞ্চল তৈরি করেছিল।” বিদ্রোহীদের দখলে থাকা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ জনগণ প্রবেশে ভয় পেত, ফলে পরিবেশ বিপর্যয় অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছিল।
অর্থাৎ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনাকাংখিত দুর্যাগ বা সংকট পরিবেশকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করেছে, বলছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে অর্থনীতি পুনরায় স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনা ও এর বিকাশ ঘটানোর কর্মকাণ্ডগুলোর সাথে পরিবেশের জন্য ব্যয়ের বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে, যাতে প্রকৃতিও স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। করোনা পরবর্তী বিশ্ব পুনর্গঠনের সাথে সাথে সবুজায়নে মনোযোগ দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কেন এই খোলা চিঠি, এ প্রসঙ্গে ড. পিয়ারসন বলেন “আমরা আশা করি যে আমাদের চিঠিটি জীববৈচিত্র্য আইন প্রণয়ন এবং মানুষের ব্যবহার, বিনিয়োগ এবং ভ্রমণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক কৌশলকে উৎসাহিত করবে।”
কৃষি প্রতিদিন
0 Comments