সকলকে জানায় আদাব ও নমস্কার। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও প্রাধিকারের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ” প্রাণী নিয়ে আপনার যে কোন ধরনের অভিজ্ঞতা ” শীর্ষক প্রতিযোগিতার জন্য আমার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু কথা নিচে তুলে ধরছি। কোনকিছু ভুল হয়ে থাকলে দয়াকরে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার আদর,যত্ন এবং ভালোবাসায় বেড়ে উঠার নাম ” ট্রাম্পি / ট্রাম্প “। ক্যাম্পাসের প্রায় সকলেরই প্রিয় সে। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে তার রাজত্ব বিদ্যমান। আমি তাকে কাছে পেয়ে আদর করেছিলাম নতুন সকলেরই মতো হাতে গুনা এক-দুবার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউন শুরুর পর, আমার সুযোগ হয় প্রাধিকারের পক্ষ হয়ে ক্যাম্পাসের কুকুর বিড়ালদের খাবার দেওয়ার। আমার সাথে থাকতো বিনায়ক দাদা,রাশেদ ভাই এবং উনার সহধর্মিণী। আমি প্রায় সময়ই যেতাম ক্যাম্পাসে উনাদের সাথে খাবার দেওয়ার জন্য। একদিন বিনায়ক দাদার সাথে থেকে হেল্পও করেছিলাম ট্রাম্পকে গোসল করানোর জন্য। মাঝখানে কয়েকদিন যাওয়া হয় নি আমার, কিন্তু ওইসব কুকুর বিড়ালগুলো কিন্তু আমাকে ভুলে নি। বিশেষ করে ” ট্রাম্পি” ছিলো তাদের মধ্যে অন্যতম।
আমি শেষ যেদিন ক্যাম্পাসে খাবার দিতে যায় তার প্রায় এক সপ্তাহ পরের ঘটনা। ঐদিন ক্যাম্পাসের ব্যাংকে যেতে হয় একটা কাজে। সেকেন্ড গেইট দিয়ে ডুকেই চোখে পড়লো ট্রাম্পকে, দাড়োয়ানের চেয়ারের পাশে শুয়েছিল সে। আমাকে দেখে তাড়াতাড়ি উঠেই চলে আসলো আমার কাছে। এদিক ওদিক আর হাতের দিকে লাফাতে শুরু করলো সে। আমার সাথে সাথেই সে টি.এস.সি বিল্ডিংয়ের দুতলায় ব্যাংকের সামনে আসে। আমি ভিতর থেকে না আসা পর্যন্তই সে ওখানে গেইটের পাশেই শুয়ে ছিলো। আবারও দেখলাম যে আমার সাথেই সে চলে আসতেছে আর বারাবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে হয়তো খাবারের জন্য। তাই একটু হাত বুলিয়ে আদর করে দিলাম, দেখলাম কিছুটা শান্ত হয়েছে। তারপর সেকেন্ড গেইটের দিকে এগুলাম,সে আমার সাথে সাথেই আসছে। একটা দোকান থেকে কেক আর বিস্কুট কিনে খেতে দিলাম,সে মনের মতো করে খেলো। সে আমার সাথে সাথে চলে আসতে দেখে তাকে গেইটের ভেতরে ডুকিয়ে দিলাম আর হাত নাড়িয়ে বোকার মতো বললাম, “ট্রাম্প, থাক তুই ভিতরে,গেইটের বাইরে আসিস না”। বোবা প্রাণী হলেও সে মনে হলো যে আমার কথা বুঝতে পেরেছে। সে ওখানেই গেইটের ভিতরে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি যতক্ষণ না আড়াল হলাম ততক্ষণই পিছনে ফিরে খেয়াল করলাম যে,সে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো আমার দিকে দৃষ্টি দিয়ে।বিশ্বাস করেন, ঐ মূহুর্তে আমার চোখের কোণে পানি চলে এসেছিল মনের অজান্তেই।
প্রায় দুই সপ্তাহ পর আবারও ব্যাংকে যেতে হলো একি কারণে। এর মধ্যে যাওয়া হয় নি ক্যাম্পাসে। এইবার ট্রাম্পের দেখা পেলাম অন্যভাবে। আমি ব্যাংকে যাওয়ার সময় সে মনে হয় খেয়াল করতে পারে নি আমার পিছন দেখে। কিন্তু ব্যাংক থেকে নামার সময় সে ঠিকি খেয়াল করতে পেরেছে। সে শুয়েছিল  FVABS বিল্ডিং -১ এর গেইটের সামনে রাস্তার একপাশে। আমাকে দেখতে পেয়েই সে উঠে দাঁড়ালো এবং ক্ষণিকের মধ্যেই দৌড়ে আমার কাছে হাজির। তাকে নিয়ে ফুচকা চত্বরের বেঞ্চিতে বসে কিছুক্ষণ আদর করে দিলাম। তারপর আমার সাথে সাথেই চলে আসলো সেকেন্ড গেইটে। এবারও কেক আর বিস্কুট দিলাম খেতে। সে খাওয়া শেষ করে নিজে নিজেই গেইটের ভিতর ডুকে গেলো। গতবারের মতো আমাকে যেতে হয়নি গেইটের ভেতরে ডুকিয়ে দিয়ে আসার জন্য। কিন্তু ঠিকই চেয়ে থাকলো আগের মতো আমার গতিপথের দিকে…
আসলে আপনার যতক্ষণ না এইরকম অভিজ্ঞতা হবে, এর আগ পর্যন্ত বুঝতে পারবেন না ঐ অনুভূতিটুকু। এসব বোবা প্রাণীদের প্রতি একবার ভালোবাসা প্রকাশ করিয়ে দেখুন ,সে আপনাকে অন্তত মনুষ্য সমাজের মতো ধোঁকা নয় বরং সুন্দর প্রতিদানই দিবে,আপনার ভালো বন্ধু হয়ে উঠবে। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আপনি একবার এসব প্রাণীদের কথা চিন্তা করুন,এরাও সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। আমাদের মতো তাদেরও একটা জীবন চক্র আছে। কেউ যদি আপনারা এসব বোবা প্রাণীদের উপকার করতে নাও পারেন,তবে অযথা কোনদিন তাদের অপকার করবেন না।
 ” When you look into the eyes of an animal, you do not see an animal.You see a living being.You see a friend. You feel a soul . ” – A.D. Wiliams
Promitush Dutta
L -2,S -1
FVABS
Sylhet Agricultural University, Sylhet.

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *