বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘লাউয়াছড়া-সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও বর্ষিজোড়া ইকো-পার্কে বনায়ন ও ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন’ নামে যে প্রকল্পের প্রস্তাব বন বিভাগ থেকে দেওয়া হয়েছে তার সাথে আমরা একমত হইনি। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে না। বন পর্যটনের জন্য নয়। এতে বনের ক্ষতি হবে।
শনিবার (৬ জুন) রাতে আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সিলেটের একটি অনলাইন পত্রিকায় ফেসবুক পেজের লাইভে এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন- লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যে সড়ক গেছে তা সরিয়ে নিয়ে বনের বাইরে দিয়ে বিকল্প সড়ক তৈরির পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
সম্প্রতি ‘লাউয়াছড়া-সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও বর্ষিজোড়া ইকো-পার্কে বনায়ন ও ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন’ নামে ৩৫ কোটি ৭৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে বনবিভাগ।
এই প্রকল্পে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের বসার জন্য আরসিসি ব্রেঞ্চ, পর্যটকদের চলাচলের জন্য ব্রিজ, সভা-সমাবেশের জন্য কনভেনশন হল, পাহাড়ের উপর যাওয়ার জন্য আরসিসি সিঁড়ি, রেস্ট হাউজ, রেস্তোরাঁ ও শিশুদের খেলার জায়গা, ঝুলন্ত সেতু ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
তবে শনিবার লাইভে এসে বন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, এই প্রকল্পে বনের ক্ষতি হবে। এটি বাস্তবায়ন করা হবে না।
এছাড়া মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া বনের ভেতর দিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমটার সড়ক পথ। বনের ভেতর দিয়ে গিয়েছে রেলপথও। এই সড়ক ও রেলপথের কারণে প্রায়ই গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায় বণ্যপ্রাণী।
এ প্রসঙ্গে শাহাব উদ্দিন বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যে সড়ক গেছে তা সরিয়ে নিয়ে বনের বাইরে দিয়ে বিকল্প সড়ক তৈরির পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। আর রেলপথের দুইপাশে ফেন্সিং করা হবে যাতে বণ্যপ্রাণী মারা না যায়।
লাউছড়ার বন্যপ্রাণী রেসকিউ সেন্টারে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে এটি সচল করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
বণ্যপ্রাণী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক সময় আমার বাড়ির পাশেও বাঘ আসত। এখন তা দেখা যায় না। বণ্যপ্রানী অনেক কমে গেছে। মানুষজন আগে শেয়াল দেখলেই মেরে ফেলার জন্য উদ্যত হতো। এখন অবশ্য অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন আসছে। এখন কোনো বন্যপ্রাণী দেখলে মানুষজন ফোন দেয়। এটা ভালো। এই ইতিবাচক পরিবর্তন আরও বাড়াতে হবে।
সিলেটে টিলা কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিলা কেটে বাড়ি বানানোর মানুষের যে মানসিকতা এটা বদলাতে হবে। আগে এই মানসিকতা ছিলো না। এখন মানুষের কিছু টাকা পয়সা হয়েছে। এখন সবাই টিলা কেটে ঘর বানাতে চায়। অথচ বাইরের দেশগুলোতে টিলার উপরেই ঘর তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, আমাদের এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
টিলাগড়ের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রসঙ্গে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী বলেন, এই সংরক্ষণ কেন্দ্রের ভেতরের রাস্তা সরিয়ে নিতে হবে। বিকল্প রাস্তার পরিকল্পনা আছে। তার আগে আমরা এখানকার ভেতরের রাস্তা দিয়ে সবধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেবো। এখানে প্রয়ো্জনীয় লোকবলও নিয়োগ দেওয়া হবো।
বনের জমি বেদখল হওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সিলেটে বনের জমির প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেদখল আছে। এগুলো উদ্ধারে কাজ চলছে। এটি আরও বেগবান করা হবে।
সিলেটের নদ-নদী খননেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ource: eyenews
0 Comments